রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় চোরচক্রের সক্রিয়তার কারণে বৈদ্যুতিক মিটার চুরির ঘটনা বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ থানা ফটকের সামনেসহ বিভিন্ন স্থানে থেকে অন্তত ছয়টি মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চুরি হওয়া মিটার ফেরত পেতে চোরদের নির্দিষ্ট বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠাতে বাধ্য করা হচ্ছে। তবে চুরি ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পাঁচ মাস ধরে মিটার চুরি
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর বাগমারা আঞ্চলিক দপ্তর ও ভুক্তভোগীদের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ মাস ধরে বাগমারা উপজেলায় মিটার চুরির ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ছয়টি মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং সেচপাম্পের মিটার রয়েছে।
চুরির পদ্ধতি
চোরেরা মিটার চুরি করে সাদা কাগজে একটি ফোন নম্বর ও মিটারের নম্বর লিখে রেখে যায়। সেই নম্বরে যোগাযোগ করলে নির্দিষ্ট অর্থ দাবি করা হয়। দরদাম করে টাকা পরিশোধের পর চুরি হওয়া মিটার নির্দিষ্ট স্থানে রেখে যাওয়া হয়। অধিকাংশ ভুক্তভোগী ঝামেলা এড়াতে পুলিশকে না জানিয়ে টাকা দিয়ে মিটার ফেরত নিচ্ছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো
বাগমারা উপজেলার বড় বিহানালী, গোবিন্দপাড়া, গণিপুর, যোগীপাড়া, হামিরকুৎসা ও মাড়িয়া ইউনিয়নে মিটার চুরির ঘটনা তুলনামূলকভাবে বেশি। গত পাঁচ মাসে অন্তত ৬৮টি মিটার চুরির শিকার হয়েছেন গ্রাহকরা।
অভিযোগ ও কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
অনেক গ্রাহকের দাবি, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরাই চুরির ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর বাগমারা আঞ্চলিক দপ্তরের মহাব্যবস্থাপক মোস্তফা আমিনুর রাশেদ বলেন, চোরদের অধিকাংশই দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান। প্রথমবার চুরির ক্ষেত্রে মিটারের মূল্যের অর্ধেক বহন করা হয়, তবে একাধিকবার চুরি হলে গ্রাহককে পুরো মূল্য পরিশোধ করতে হয়।
স্থানীয়দের উদ্বেগ
থানার গেটের সামনেই মিটার চুরির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের মধ্যে অনেকেই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। কিন্তু চোরদের শনাক্ত করতে মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিং বা পুলিশি তৎপরতা যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশের অবস্থান
বাগমারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, চোরচক্রকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তবে থানার সামনেই মিটার চুরির ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবগত নন।
চুরি ঠেকাতে স্থানীয়দের দাবি
স্থানীয় বাসিন্দারা চুরি ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিদ্যুৎ বিভাগ ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষত চোরদের মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিং করে গ্রেপ্তারের দাবিতে জোর দিয়েছেন তাঁরা।
উপসংহার
বৈদ্যুতিক মিটার চুরির ঘটনা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই করছে না, বরং স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন যাতে চুরির এই ধারা রোধ করা যায় এবং ভুক্তভোগীদের সুরাহা নিশ্চিত হয়।
0 coment rios: